প্রযুক্তি নিয়ে মানুষের আগ্রহ এবং কৌতূহলের শেষ নেই। বর্তমানে সারা বিশ্বের মানুষ যে সকল পেশায় সবচেয়ে বেশি নিযুক্ত হচ্ছে, তারমধ্যে প্রযুক্তি অন্যতম। আপনি যদি আইটি সেক্টরে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে চান, অথবা আপনি চিন্তা করছেন এই সেক্টরে আপনার ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে! তাহলে আজকের এই লেখাটি আপনার জন্য।

আইটি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে অভিজ্ঞদের অনুসরণ করা জরুরী; Source: techrepublic.com

রবার্ট হাফ টেকনোলজি নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি সেক্টরের প্রায় ৮,০০০ অভিজ্ঞ কর্মীদের সাথে কথা বলে আইটিতে ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারে একটি জরিপ চালিয়েছে। সেই জরিপের বিষয় ছিল, কেমন হতে পারে আইটি সেক্টরে আপনার ক্যারিয়ার এবং আইটিতে ক্যারিয়ার গড়ার বিষয়ে অভিজ্ঞদের পরামর্শ। রবার্ট হাফ টেকনোলজির সেই প্রতিবেদনের আলোকে আজকের থাকছে আজকের এই লেখাটি।

নতুন সব প্রযুক্তির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে

প্রযুক্তি এমন একটি সেক্টর, যা প্রায়ই পরিবর্তনশীল। যেমন প্রতিনিয়তই নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার হচ্ছে, অথবা পুরাতন প্রযুক্তিগুলো নতুন করে আপডেট করা হচ্ছে। সুতরাং, আপনাকে সব সময় আধুনিকায়নে বিশ্বাস রাখতে হবে এবং যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো প্রযুক্তির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। অন্যথায় দ্রুতই আপনার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

প্রযুক্তি আপডেট হওয়ার সাথে সাথে নিজেকেও বদলাতে হবে; Source: itcareerlab.org

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নকিয়ার ব্যাপারে। বৈশ্বিক আধুনিকায়নের সাথে নিজেদেরকে আপডেট না রাখার কারণে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে বিশ্বসেরা খ্যাতি পাওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। তাই সময়ের সাথে সাথে নিজেদের আপডেট রাখা একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কাজকে গুরুত্ব দেওয়াটা খুবই জরুরী; Source: rasmussen.edu

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ৮,০০০ অভিজ্ঞ কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, একজন সফল প্রযুক্তি কর্মী সহজেই নিজেকে নতুন সকল প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত থাকে। সেই লক্ষ্যে সফল কর্মীরা নিজের স্কিল এবং নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে সর্বদা শিখতে থাকে। সেটা কোনো কোর্স করেই হোক, অনলাইন থেকেই হোক অথবা অভিজ্ঞ কোনো প্রযুক্তি কর্মীর নিকট থেকেই হোক।

একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নিকট সেসকল কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়, যারা নতুন প্রযুক্তি আসার সাথে সাথে নিজেদেরকে দক্ষ বলে প্রমাণ করতে পারে। আইটি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই আপনাকে নতুন সব প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা বা জ্ঞান রাখতে হবে।

আপনার কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে হবে

পৃথিবীতে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করে থাকে। তবে তাদের মধ্যে খুবই অল্পসংখ্যক আছেন যাদের খুব ভালো কমিউনিকেশন স্কিল রয়েছে। একজন সফল প্রযুক্তি কর্মীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তার কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানো। ‌গ্রাহকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ করা, প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত সকল অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সুসম্পর্ক এবং সর্বদা যোগাযোগ রাখার জন্য একজন প্রযুক্তি কর্মীর নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তার কমিউনিকেশন স্কিল।

রবার্ট হাফ টেকনোলজির জরিপ অনুসারে সিআইও একটি রিপোর্ট প্রদান করে। সেই রিপোর্টে বলা হয় যে, শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যে বিষয়গুলোর উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়, তার মধ্যে কমিউনিকেশন স্কিল, লেখালেখি, আন্তঃসম্পর্কিত বিষয় এবং গ্রাহক ও অংশীদারদের সাথে মুখোমুখি মিটিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিকেশন স্কিলের অনেকগুলো ধাপ রয়েছে।

সর্বদা নিজের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করুন; Source: cio.com

যেমন, একটি ভালো ইমেইল লিখতে পারা। আপনাকে যেকোনো সময় একটি জরুরি ইমেইল পাঠানো লাগতে পারে। সেজন্য একজন প্রযুক্তি কর্মীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইমেইল লেখার দক্ষতা থাকা। আপনাকে যেকোনো সময় ক্লায়েন্টের সামনে সমস্যার সমাধান ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন হতে পারে। যেমন আপনি কাজটি কীভাবে করবেন, কীভাবে কাজটি করলে ভালো হবে তা নিয়ে ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলা।

অথবা আপনার কোম্পানির সার্ভিসগুলো ক্লায়েন্টের সামনে বিস্তারিত বর্ণনা করা। এসকল ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার উপস্থাপনা ভালো হতে হবে। দেখা গেছে অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালো মানের ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে। তবে খুব কমই আছেন, যারা তাদের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর জন্য কাজ করে থাকেন। তাই একজন প্রযুক্তি কর্মীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানো।

নিজের মধ্যে গ্রাহক সেবা দেয়ার দক্ষতা বাড়াতে হবে

আপনাকে অবশ্যই একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যেসকল পন্য নিয়ে ব্যবসা করে থাকে, তার সবগুলোই গ্রাহকদের জন্য। একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গ্রাহক সেবা। তাই বর্তমানে আধুনিকায়নের সাথে সাথে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক সেবা বা কাস্টমার সার্ভিস বাধ্যতামূলক করে রেখেছে।

নির্দিষ্ট যেকোনো বিষয়ের উপর অভিজ্ঞ হোন; Source: nextiva.com

রবার্ট হাফ টেকনোলজির নিকট একজন প্রযুক্তি কর্মী বলেছেন যে, একজন গ্রাহক তার সমস্যার সমাধানের চেয়ে হাসিমুখে না শুনতে পছন্দ করেন। কিন্তু গ্রাহক কখনোই খারাপ আচরণ আশা করে না। তাই আপনাকে অবশ্যই গ্রাহক সেবা দিতে পারদর্শী হতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের স্কিল বাড়ানো খুবই জরুরী।

আপনাকে যেকোনো একটি বিষয়ে অভিজ্ঞ বা স্পেশালিষ্ট হতে হবে

একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সাধারণত এমন কর্মীর সন্ধানে থাকেন যার অনেকগুলো বিষয়ের উপর ধারণা রয়েছে, তবে একটি বিষয়ে সে বিশেষজ্ঞ। আপনি যদি একসাথে অনেকগুলো বিষয়ের উপর বিশেষজ্ঞ হতে চান, তাহলে তা কখনোই পারবেন না। তাই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো চায় আপনার যেকোনো একটি বিষয়ের উপর অভিজ্ঞতা থাকবে। তাই নিজেকে এমন কোনো বিষয়ের উপর অভিজ্ঞ করুন, যে বিষয়ে আপনি কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে পাশাপাশি আপনাকে অন্যান্য বিষয়ের প্রতি ধারণা রাখতে হবে।

আপনার লক্ষ্য থাকতে হবে অটুট

বর্তমানে প্রযুক্তি দুনিয়াতে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে আপনাকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, সময়ের মূল্যায়ন করতে হবে এবং সময়ের কাজ সময়ের মধ্যেই করতে হবে। রবার্ট হাফ টেকনোলজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে সমস্ত মানুষ প্রযুক্তিতে বিশ্বখ্যাত হয়েছেন, তারা সকলেই কঠোর পরিশ্রম এবং সময়ের মূল্যায়ন করেছেন। এমনকি তারা সকলেই একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছে। যেমন ধরুন, আপনার একটি ইমেইল পাঠানো দরকার রাতের মধ্যে, আপনাকে রাতেই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।

ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর অটুট লক্ষ্য থাকতে হবে; Source: cgi.com

অথবা কোন ক্লায়েন্টকে আগামীকালের মধ্যে প্রজেক্ট বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে অবশ্যই আপনাকে আগামীকালের মধ্যেই তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আপনাকে সব সময় মনে রাখতে হবে আপনার আশেপাশে আপনার অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে। আপনার বিন্দু পরিমাণ ভুল আপনাকে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাতে দিবে না। সুতরাং প্রযুক্তি দুনিয়াতে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনার কাজকে ভালবাসতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে, এবং কাজে মনোনিবেশ করতে হবে।

Feature image source: itcareerfinder.com