আমরা বড় বড় কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সব দক্ষতা অর্জন করি। কিন্তু নিজেকে আরও বেশি মানবিক করে তোলার জন্য, আরো বেশি আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য কতটুকু চেষ্টা করি?

photo: knowledge.wharton.upenn

সুখী, স্বচ্ছন্দ জীবন এবং সবার সাথে আন্তরিক সম্পর্কের প্রয়োজনে মানুষের কিছু বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হয়, যা কোনো স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখানো হয় না। অথচ এই দক্ষতাগুলোই আপনার জীবনকে আরো বেশি সুখী এবং মানবিক করতে সবচেয়ে বেশি কাজ করে। চলুন মানবিক হওয়ার কিছু দক্ষতা অর্জন করি।

১. যেকোনো বয়সের মানুষের সাথে কথা বলতে পারা

শিরোনাম দেখে মনে হতে পারে এটা কোনো বিশেষ যোগ্যতা, বা দক্ষতা নয়। কথা বলতে যে কোনো মানুষ পারে। যে কোনো মানুষের সাথে কথা বলার দক্ষতার ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি যদি এমন হয় তাহলে আপনি অপরিপক্কদের রাজত্বে বসবাস করছেন।

photo: youtube

যেকোনো বয়সী মানুষের সাথে কথা বলার দক্ষতা সবার মধ্যে থাকে না। কোন রকম দ্বিধা বা বাধা-বিপত্তি ছাড়া ৫ বছর বয়সী শিশুর সাথে এবং ৯২ বছর বয়সী বৃদ্ধের সাথে প্রানবন্ত কথা বলতে পারা নিঃসন্দেহে একটি বিশেষ গুণ। এই গুণ আপনার মানসিক পরিপক্কতা এবং মানবিকতার পরিচয় বহন করে। এমনকি বলা যায় সত্যিকারের স্মার্ট মানুষ হচ্ছে তারা যারা সব শ্রেণী-পেশার এবং সব বয়সী মানুষের সাথে প্রানবন্ত কথা বলতে জানে। আপনি যদি নিয়মিতভাবে এটা চর্চা করেন তবে জীবনের এক অন্য অর্থ খুঁজে পাবেন।

২. ‘দুঃখিত’ বলা এবং ভুল স্বীকার করা

সম্ভবত এক শব্দে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বাক্য হলো ‘সরি’, যা বিরাট দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সমাধান করতে পারে, ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া দিতে পারে, দূরে সরে যাওয়া মানুষকে ফিরিয়ে আনতে পারে। অথচ এই সহজ এবং ছোট বাক্যটি পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ বলতে জানে না! নিজের ভুল থাকা শর্তেও আমাদের মধ্যে এক ধরনের অহংকার কাজ করে। যার প্রতাপে আমরা ‘সরি’ শব্দটি বলতে চাই না, ক্ষমা প্রার্থী হতে পারি না।

অথচ গভীরভাবে মূল্যায়ন করলে ইগো বা অহংকার আমাদের কখনোই সম্মানিত করে না। পৃথিবীর সব মানুষ যদি  অহংকার ত্যাগ করে নিজের ভুল স্বীকার করতে জানতো এবং এই ছোট্ট শব্দ ‘সরি’ ব্যবহার করত তাহলে পৃথিবীটা  সুখে শান্তিতে ভরে উঠতো।

photo: the swaddle

আপনি জানেন আপনি কে! আপনি কতটা জ্ঞানী, সম্মানী এবং আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ তা একান্ত আপনিই ভালভাবে জানেন। সুতরাং আপনি নিশ্চয় জানেন নিজের দোষ স্বীকার করা কত মহৎ কাজ। পথ চলতে মানুষের ভুল হতেই পারে। কোনো মানুষ ভুলত্রুটির উর্ধ্বে নয়।

সুতরাং সুখী, সুন্দর জীবনের জন্য সরি বলা এবং নিজের দোষ স্বীকার করার দক্ষতা রপ্ত করতে হবে। আপনার চারপাশের সব মানুষ যখন নিজেকে নিয়ে অহংকার করে, তখন আপনাকে শিখতে হবে কিভাবে ‘সরি’ বলতে হয়। এ অসামান্য দক্ষতা আপনাকে আরো বেশি সফল এবং মানবিক করে তুলবে।

৩. সাহায্য চাওয়া

কোনো মানুষ পৃথিবীতে একা বসবাস করতে পারে না। কোনো না কোনো ভাবে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া আমরা জীবনের প্রয়োজনে বিভিন্ন মানুষের উপর নির্ভরশীল। তবে এই স্বাভাবিক নির্ভরশীলতার বাইরেও আমাদের বিশেষ সাহায্যের প্রয়োজন হয়। জীবনের নানা সময়ে বিভিন্ন ধরনের সংকট মোকাবেলা করতে অন্যের সাহায্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। কিন্তু এই সাহায্য চাইতে সাহস লাগে। হ্যাঁ, সত্যি। অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া খুব সাহসিকতার পরিচয়।

photo: medium

সুতরাং আত্ম অহংকার ত্যাগ করে প্রয়োজনে অন্যের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার সাহস গড়ে তুলুন। জীবনের প্রয়োজনে আপনার অবশ্যই অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হবে। কিন্তু আপনি যদি নিজের মধ্যে এই দক্ষতা সৃষ্টি না করতে পারেন, তবে বিপদের মুহূর্তে শুধু অন্যের সাহায্য চাওয়ার অভাবে বিপদ মুক্ত হতে পারবেন না। সুতরাং অহংকার ত্যাগ করুন এবং প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য প্রার্থী হোন।

৪. রাগ নিয়ন্ত্রণ করা

যেসব মানবিক দক্ষতা মানুষের জীবনকে সুন্দর করে তোলে তার অন্যতম একটি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে জানা। পথ চলতে বিভিন্ন সময় আপনি বিভিন্ন মানুষের দ্বারা উত্ত্যক্ত হবেন। ফলশ্রুতিতে আপনি রাগান্বিত হবেন। কিন্তু এই রাগের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটার পূর্বেই আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। কেননা রাগান্বিত অবস্থায় নেওয়া বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত ভুল হয়।

photo: qposts

অন্য কেউ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে যদি আপনার ক্ষতি করার জন্য আপনাকে রাগান্বিত করার চেষ্টা করে, তবে কি আপনি তার পাতানো ফাঁদে পা দিবেন? নিশ্চয় না! অধিকাংশ সময় যেসব কারণে আমরা রাগান্বিত হই রাগ প্রশমিত হয়ে গেলে সেই সব কারণ এতটা গুরুতর বলে মনে হয় না। কিন্তু রাগান্বিত অবস্থায় যদি আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করি তবে তা গুরুতর রূপ ধারণ করে। এমনকি অসংখ্য মানুষের সম্পর্ক, ক্যারিয়ার, ও জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে শুধু রাগের কারণে।

সুতরাং সুস্থ, সুন্দর এবং সুখী জীবন যাপন করতে হলে আপনাকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। যত খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক, অন্য কেউ আপনাকে যতটাই বিক্ষিপ্ত করে তুলুক না কেন, নিজের রাগ সবসময়ই নিয়ন্ত্রণে রাখুন। মনে রাখবেন, আপনি নিজেকে যতটা নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারবেন তত দূরের গন্তব্যে পৌছাতে পারবেন।

৫. কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন যেকোনো সম্পর্ক আরও বেশি মজবুত করতে সবচেয়ে মোক্ষম হাতিয়ার। আপনি যদি এখনও ধন্যবাদ জ্ঞাপন নোট লেখা না শিখে থাকেন তবে আজই শিখে নিন। ব্যক্তি বা কর্মজীবনে যে কোনো সম্পর্কে বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জনে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের অভ্যাস গড়ে তুলুন। কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জ্ঞানের চর্চা উভয়পক্ষকে লাভবান করে, খুশি রাখে, এবং সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে।

প্রতিদিন আপনার সাথে সাক্ষাৎ হওয়া সব মানুষকে আন্তরিকতার সাথে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন। নতুন সহকর্মী, বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা, পুরনো বস, এমনকি আপনার নিজের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনকেউ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন। সুযোগ বুঝে এই মানুষগুলোর কাছে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কখনো নিজের দীনতা প্রকাশ নয়। কৃতজ্ঞ মানুষেরাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে। সুতরাং আপনি যদি আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তবে অবশ্যই আপনার মধ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপনের অভ্যাস সৃষ্টি করতে হবে।