কেন বুদ্ধিমানেরাও বোকাদের মতো কাজ করে?

আপনাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা চূড়ান্ত রকমের জ্ঞানী! তাদের চালচলনই আলাদা! কিন্তু এইসব বুদ্ধিমান লোকেরাই কিন্তু মাঝে মাঝে এমন সব কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে, যেই ভুলগুলো অন্য সাধারণ মানুষেরাও করে থাকে না। কেন এমনটা হয়, জানেন?

চিন্তা করা ছাড়া জীবনের গতি নেই; ছবিসূত্র: namespace

ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. হেদার এ. বাটলার, এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি এই অজানা রহস্যের জট খুলেছেন যে কেন বিজ্ঞরাও এমন বোকামির কাজ করে থাকে।

সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার ব্যাপারেও সাধারণ মানুষ সচেতন; ছবিসূত্র: thenet.com

যেমন, আপনারা যারা সাধারণ বুদ্ধিমত্তার মানুষ, তারা খুব সাবধানে গাড়ি কিনেন, সেটা সেকেন্ডহ্যান্ড হলেও। কিন্তু সেকেন্ডহ্যান্ড হলে কী হবে? গাড়িতে একটা আঁচড়ও থাকতে পারবে না। এমনকি নেতৃত্ব দেওয়ার সময় আসলে সেই দায়িত্ব গ্রহণ করার সময়ও কেউ পিছপা হন না। চাপের মধ্যে থেকেও সবাই ভেবেচিন্তে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বুদ্ধিমান মানুষদের কথা ভাবলে সবার মাথায় আসে এমন সব মানুষদের কথা, যারা ছোট ছোট ব্যাপার সহজেই মনে রাখতে পারে, জটিলভাবে চিন্তা করতে পারে, গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারে, সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে পারে।

বুদ্ধিমত্তা কখনো পরীক্ষার মাধ্যমে মাপা যায় না; ছবিসূত্র: deviantart.com

আপনারা তাদেরকে স্মার্ট বলে থাকেন, কেননা তাদের গ্রেড আপনাদের তুলনায় ভাল, অন্যদের থেকে ভালভাবে জীবনে সফল হতে পারে, ভাল চাকরি পায়। কিন্তু সবসময়েই একই জিনিস হয় না। আপনারা অনেক খামখেয়ালি মানুষদের জানেন, যারা বুদ্ধিমান হওয়া সত্ত্বেও জীবনে কিছুই করতে পারেনি! এমন অনেক বিজ্ঞানীরা আছেন, যেমন স্যার আইজ্যাক নিউটন, আলবার্ট আইনস্টাইনসহ অনেকেই যারা কর্মজীবনে সফল হলেও ব্যক্তিগত জীবন বা দাম্পত্যজীবনে খুব একটা সুখে ছিলেন না। কেননা তাঁরা আপনাদের মতো একসাথে দুইটা জিনিস সামাল দিতে পারতেন না।

বাটলার বলেছেন,

“স্কুলজীবনে ভাল ফলাফল করা ছাত্রদের দেখে মনে হতে পারে তারা জীবনে অনেক উন্নতি করবে। কিন্তু তারা অনেকেই সেটা করতে পারে না। কেননা এত মেধা নিয়ে তারা কোথায় যাবে?”

অনেকের বুদ্ধিমত্তা বেশি থাকা সত্ত্বেও তারা জটিল চিন্তা করতে পারে না। তারা তাদের বুদ্ধিমত্তা কোনো কাজেই লাগাতে পারেন না। কেননা কোন কাজে যে লাগাবে, সেটাই বুঝে উঠতে উঠতে সময় চলে যায়।

জটিল ভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে সহজেই একটা সমস্যার একাধিক সমাধান পাওয়া যায়। জটিলভাবে যারা চিন্তা করে, তারা জীবনে উন্নতির শিখরে চড়তে পারে। কেউ যদি এইভাবে চিন্তা করে, তার জীবনের চলার পথ খুব মসৃণ হয়ে যায়। তারা জীবনে খুব কমই খারাপ পরিস্থিতির শিকার হয়। বুদ্ধিমান মানুষেরা যেসব ভুল বেশি করে থাকে, তা হলো-

১. একাডেমিক (পরীক্ষার সময় ভুলে যাওয়া, ভুল বিষয়ের উপর পড়ে আসা ইত্যাদি)

২. স্বাস্থ্য (ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া, সময়মতো ডাক্তারের কাছে না যাওয়া ইত্যাদি)

৩. আইন ( ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করা, জোরে গাড়ি চালানো)

৪. ব্যক্তিগত জীবন ( সঙ্গীকে ধোঁকা দেওয়া, পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া, ছোট ছোট জিনিস ভুলে যাওয়া)

৫. আর্থিক (অতিরিক্ত অর্থ খরচ করা) অথচ জটিলভাবে যারা চিন্তা করে, তারা এমন ভুল খুব কমই করে।

যেমন বলা যায় মধ্যবিত্ত মানুষদের কথা। তাদেরকে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য অনেক কিছুর কথা মাথায় রাখতে হয়। জীবনে ভাল কিছু করতে হলে সব পরীক্ষা সময়মতো দিতে হবে। ওষুধ ঠিক মতো না খেলে শরীর আরো খারাপ করবে। তখন দেখা যেতে পারে দ্বিগুণ মূল্যের ওষুধ কেনা লাগবে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সকলেই চায় পরিবারের সব সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে। কিছু শখ আহ্লাদ পূরণ করার চেষ্টা করতে। তাই তারা হয় খুব হিসেবী। যার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না, যেখানে সেখানে টাকাও খরচ করে না। তাহলে কোনটা ভাল: জটিল ভাবে চিন্তা করা না বুদ্ধিমান হওয়া?

বাটলারের মতে তার রিসার্চে দেখা যায়,

“বুদ্ধিমানেরা যেসব ক্ষেত্রে ভালো করে, জটিল চিন্তনকারীরা সেই সব বিষয়ে তাদের চেয়েও বেশি ভালো করেছে।”

জটিলভাবে চিন্তা যারা করেন, তারাই সফল হন; ছবিসূত্র: thenet.com

আপনারা যারা এভাবে চিন্তা করতে পারেন, তাদের উচিত আরো বেশি বেশি চিন্তা করা। বিভিন্ন জায়গায় মাথা খাটানোর। কেউই জেনেটিকালি কারো বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে পারে না, তবে যা আছে সেটাকে শাণিত করতে পারবে। হতে পারে তাদের আইকিউ সাধারণদের থেকে বেশি, কিন্তু কখনোই একটি পরীক্ষা দ্বারা কাউকে বুদ্ধিমান বা কম বুদ্ধিমান তকমা দেওয়া যাবে না। সেটার জন্য আপনি রুবিকস কিউব মিলাতে পারেন, সুডোকু, শব্দজট, ব্রেইন গেমস ইত্যাদি খেলতে পারেন। চাইলে কারো সাথে কিংবা মোবাইল- কম্পিউটারে দাবা খেলতে পারেন। এগুলো আপনাকে ভাবতে শিখাবে।

আর বেশি বেশি বই পড়ুন। কেননা বই পড়ার মাধ্যমে আপনার সামনে নতুন এক অধ্যায় খুলে যাবে। ফলে আপনি হবেন জ্ঞানের জন্য তৃষিত। আপনার জানার আগ্রহ বাড়বে। আপনি জানতে চাবেন কেন এমন হলো, কী জন্য হলো, এটা হওয়ার পেছনের কারণ কী? এভাবে এটা আপনাকে ভাবতে শিখাবে। আর ভাবার ফলেই আপনি আস্তে আস্তে জটিলভাবে চিন্তা করতে শিখবেন। তখন আপনার সামনে যত কঠিন বাধা আসুক না কেন, আপনি ঠিকই তা সামলে নিতে পারবেন।

কিন্তু কোনো এক কারণে অনেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের এই চিন্তা করার ক্ষমতা শুধু একটা বিষয়ের উপরেই সীমাবদ্ধ থাকে। আপনার যদি কখনো মনে হয় আপনার জীবনে হিন্দি ডেইলি সোপগুলোর মতোন একের পর এক ঝামেলা আসছেই, ঝামেলা শেষ হচ্ছে না; তাহলে ঘাবড়ে যাবেন না! কেননা এই সমস্যাই আপনাকে আরো জটিল করে ভাবতে শেখাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *